‘কৃষিকথা’ এ দেশের কৃষি আর কৃষকের কথা তুলে ধরছে মানুষের কাছে গত পঁচাত্তর বছর ধরে। কৃষি বিষয়ক এ পত্রিকাটি এদেশের কৃষি উন্নয়নের নানা পরিবর্তনের এক নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। এ দেশের কৃষির পরিবর্তন আর রূপান্তরের স্বাক্ষর এর প্রতিটি পাতায় পাতায়। ‘কৃষিকথা’ এ দেশের কৃষকের কাছে এক অতি জনপ্রিয় পত্রিকা। এ দেশের কৃষির সাথে অম্বিষ্ট হয়ে থাকা ‘কৃষিকথা’ পত্রিকা যখন নিজেই নিজের কথা বলতে শুরু করে তখন তা আকর্ষণীয় ঘটনা না হয়েই পারে না। কৃষিকথার নিজের জবানীতে কৃষিকথার জন্ম কথা, দেশের নানা ঘটনা পরম্পরাসহ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষি নিয়ে কিছু উক্তি, কৃষিকথার কিছু লেখকের স্মৃতি এবং কৃষিকথায় প্রকাশিত কিছু আকর্ষণীয় কবিতা অবলম্বনে কৃষিকথায় নানা প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন কৃষিকথার সহকারী সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান। গত প্রায় এক দশক সময় ধরে মতিয়ার রহমান এই পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার সুবাদে অনেক অজানা বিষয় চমৎকারভাবে ‘কৃষিকথা বলছি’ গ্রন্থটিতে তুলে এনেছেন। আশ্চর্য এক মমতায় লেখক এর মধ্য দিয়ে কৃষিকথার ইতিহাসকে সবার সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি কৃষিকথার নানা বিবর্তনের পাশাপাশি তুলে এনেছেন কৃষিকথার দায়িত্ব পালনকারী সম্পাদকদের তালিকা, তুলে এনেছেন কৃষিকথার কয়েক জন বিশিষ্ট বন্ধুর পরিচিতি, কৃষি তথ্য সার্ভিসের অফিস প্রধানদের তালিকাসহ কৃষিকথা মুদ্রণ কাজের নানা ধাপগুলোও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ দেশের কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রযুক্তি প্রচার ও এর প্রসার ঘটাতে সদা দায়িত্ব পালন করে আসছে। কৃষিকথা তার জবানীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসসহ তুলে ধরেছে বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও। কৃষির নানা টুকিটাকি বিষয়ের সংজ্ঞা তিনি সবার জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করেছেন সহজ ভাষায়। এমনকি এ দেশে কৃষি নিয়ে যেসব পত্রিকা বের হচ্ছে সেসব পত্রিকার সম্পাদকসহ পত্রিকার তালিকাও রয়েছে এ গ্রন্থটিতে। জনাব রহমান তার সারা জীবনই মূলত কাটিয়েছেন কৃষিকথার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। অত্যন্ত ধৈর্যশীল, অমায়িক এক নিরেট ভদ্রলোক মানুষ তিনি। কৃষিকথার সম্পাদকের সাথে এর লেখকদের কদাচিৎ দেখা হয়েছে বটে তবে জনাব রহমানের সাথে লেখকদের এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এর সাথে তার দীর্ঘ বন্ধনের কারণেই। ফলে এ ধরনের একটি গ্রন্থ রচনার অধিকার তার রয়েছে বলে আমাদের মানতেই হবে।
ফলে তিনি যে কৃষিকথার সুপার ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পেরেছেন সে কথা বলাইবাহুল্য। এ স্বীকৃতি কৃষিকথা যে দিয়েছে সেটিও যৌক্তিক কারণে সঠিক হয়েছে বলে মনে হয়। ‘কৃষিকথা বলছি’ গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করা হয়েছে অনেকগুলো কৃষিকথার কাভার পৃষ্ঠা দিয়ে। গ্রন্থটি যে কৃষিকথার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখিত এর শুধু নাম নয় বরং এর প্রচ্ছদই সে কথা বলে দিচ্ছে। সুন্দর ঝকঝকে ছাপা ১২০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রান্ত প্রকাশন, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০। এর মূল্য ২০০ টাকা মাত্র। গ্রন্থটি কৃষিকথার ভক্ত পাঠক ছাড়াও দেশের কৃষি ও কৃষির রূপান্তর নিয়ে যারা ভাবেন তাদের জন্য একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে পরিগণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি বইটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করছি। বইটি কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিক্রয় কেন্দ্র ও প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে (মোবাইল : ০১৭১৩৭৪৪৩৮০) সংগ্রহ করতে পারেন।
ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া*
* প্রফেসর, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ এবং প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭